বাকির খাতা বাড়িতে নিয়ে সযত্নে রেখে দিয়েছেন শফিকুল ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহী নগরের মির্জাপুর এলাকায়

‘বাকির খাতা’ বাড়িতে নিয়ে সযত্নে রেখে দিয়েছেন। লেখাপড়া জানা কাউকে পেলে সেই খাতা থেকে ফোন নম্বর তুলে ফোন দেন তিনি। তাঁদের কেউ আশ্বাস দেন, কেউ–বা ফোনই ধরেন না। কিন্তু বকেয়া টাকা আর হাতে আসে না। উল্টো মুঠোফোন বিলের খরচ বেড়ে যাচ্ছে তাঁর।

বলছিলাম শফিকুল ইসলামের (৪৬) কথা। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শফি ভাই’ নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে তিনি ক্যানটিন চালাতেন। গত আগস্টে তাঁকে ক্যানটিন ত্যাগ করতে হয়। শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাবেন। ওই সময় একদল শিক্ষার্থী তাঁকে ক্যানটিন থেকে চলে যেতে সময় বেঁধে দেন। পরে হল প্রাধ্যক্ষের কাছে গিয়েও তাঁর কোনো লাভ হয়নি। বর্তমানে তিনি বেকার।

২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ক্যানটিন পরিচালনার দায়িত্ব পান শফিকুল ইসলাম। তাঁর দাবি অনুযায়ী, তখন থেকে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তাঁর কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বাকিতে খেয়ে আর পরিশোধ করেননি। বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। তিনি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলা থেকে ১৯৭৮ সালে মা-বাবার সঙ্গে রাজশাহীতে আসেন। তাঁর বাবা আগে থেকেই শহীদ শামসুজ্জোহা হলের কর্মচারী ছিলেন। বর্তমানে নগরের বিনোদপুর এলাকার মির্জাপুরে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন। ছোটবেলা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বড় হয়েছেন; বিভিন্ন হলের ক্যানটিন, ডাইনিংয়ে ফুট-ফরমাশ খেটেছেন।

শফিকুল ইসলাম লেখাপড়া জানেন না। তাই কে কত টাকা বাকিতে খেয়েছেন, সেটা বলতে পারেন না। তবে বাকি লিখে রাখার জন্য তাঁর খাতা রয়েছে। কে কত টাকা বাকিতে খেয়েছেন, তা শিক্ষার্থীরাই লিখে রাখেন। ২০১৬ সালে একবার বেশ কয়েকটি খাতা পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। কয়েকটি খাতা হারিয়ে গিয়েছে। বর্তমানে তাঁর কাছে পাঁচটি খাতা রয়েছে। এই খাতাগুলো লেখাপড়া জানা মানুষকে দিয়ে পড়িয়ে হিসাব করে দেখেছেন, ওই পাঁচ খাতাতেই দুই থেকে আড়াই লাখের বেশি টাকা বাকি পড়েছে।